আগুনডানা মেয়ে PDF: লেখক সাদাত হোসাইন এর বই “আগুনডানা মেয়ে” অন্যপ্রকাশ কর্তৃক প্রকাশিত ৷ বইটি নতুন, প্রকাশিত হয়েছে ২০২৪ সালে ৷ পাঠক প্রিয় বইটির হার্ডকপি নিতে চাইলে নিচে লিংকে ক্লিক করে অর্ডার করতে পারেন ৷ আপনারা অনেকেই সাদাত হোসাইন এর বই আগুনডানা মেয়ে পিডিএফ অনলাইনে খুজে থাকেন, তাদের জন্য আজকের পোষ্ট ৷
বই বিবরণঃ
বইঃ | আগুনডানা মেয়ে ৷ |
লেখকঃ | সাদাত হোসাইন ৷ |
প্রকাশনীঃ | অন্যপ্রকাশ ৷ |
প্রকাশঃ | ২০২৪ |
ক্যাটাগরিঃ | সমকালীন উপন্যাস |
পেইজ সংখ্যাঃ | ৩০৪ |
গল্পটা আক্ষরিক অর্থে পাখির হলেও সামগ্রিকভাবে প্রতিটা মেয়ের জীবনের গল্পের প্রতিচ্ছবি। গল্প পড়াকালীন কোথাও কোথাও নিজেকে ভীষনভাবে উপলব্ধি করেছি। এ গল্প মুক্তির লড়াইয়ের গল্প কিন্তু কার মুক্তির? কেবলই কি পাখির নাকি গোটা দেশ গোটা জাতির মুক্তির লড়াই? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে পড়তে হবে ” আগুনডানা মেয়ে”।
বইটির ভূমিকা থেকে
‘আগুনডানা মেয়ে’ উপন্যাসটি লেখার পেছনে পাঠকের একটা বড় ভূমিকা আছে। বিশেষত, ‘আরশিনগর’ ও ‘নিঃসঙ্গ নক্ষত্র’ উপন্যাসের অতৃপ্ত পাঠকদের। প্রকাশের পর বহু বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো এই দুটি উপন্যাসের দুই চরিত্র ‘আরশি’ ও ‘অনু’র পরবর্তী জীবন দেখতে চান তারা। জানতে চান তাদের ভিন্ন এক জীবনের গল্প।
সেই ভিন্ন জীবন কী? কেমন?
‘আগুনডানা মেয়ে’ সম্ভবত সেই প্রশ্নেরই উত্তর। আমার মন বলছিল, পাখি নামের এই আগুনডানা মেয়ে চরিত্রটিতে আমি আমার অবচেতনেই হয়তো আরশি এবং অনুকে যুগলবন্দি করার চেষ্টা করেছি। সেই যুগলবন্দিতে তারা হয়ে উঠেছে এক প্রতিবাদী মিছিলের মানচিত্র। এক জীবনজয়ী নারীর চিত্র ও চরিত্র।
সেই নারী আরও অসংখ্য মানুষের প্রতিচ্ছবি কিংবা প্রতিবাদের প্রতিবিম্বও।
আগুনডানা মেয়ে—সাদাত হোসাইন
‘আগুনের চেয়ে ঢের পুড়েছে যে মেয়ে,
সাদাত হোসাইন
তার আছে আগুনের ডানা।
এ লড়াই জানে মুক্তির মানে,
পাখি তাই সীমানা জানে না।’
আগুনডানা মেয়ে বই থেকে কিছু অংশ(একটু পড়ুন)
পাখি অবশ্য বিয়েটা এখনই করতে চায় নি। আর দিনকয়েক বাদেই তার মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু। এই পরীক্ষা অবধি আসতে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ দীর্ঘ পথ তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে। বাবার অনিচ্ছা, প্রবল দারিদ্র্য আর চারপাশের নানান প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। কিন্তু এখন সেইসব লড়াই, প্রতিজ্ঞা ছেড়ে দিয়ে চটজলদি বিয়ের শাড়ি পরতে হচ্ছে তাকে! বিষয়টি কয়েকদিন আগে হলেও সে বিশ্বাস করত না। কিন্তু পাখি জানে, এই মুহূর্তে এছাড়া আর কোনো উপায় তার নেই। ফলে সে চুপচাপ সব মেনে নিয়েছে। কিন্তু সেই মেনে নেওয়ার অর্থ যে এমন ভয়ানক হতে পারে, তা তার কল্পনায়ও ছিল না।
আমজাদ পাখির বমির বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। বরং যেন কিছুই হয় নি এমন ভঙ্গিতে বলল, ‘শাড়ি-ব্লাউজ খুইলা বিছনায় চিৎ হইয়া শো। আমি বাইর থিকা মুইতা আসতেছি।’ বলেই কাশতে কাশতে চলে গেল সে। পাখি কী করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। তার ইচ্ছে হচ্ছিল ঘর থেকে ছুটে বের হয়ে যেতে। কিন্তু তা সম্ভব নয়। তাকে এখানেই থাকতে হবে। এই মানুষটার সঙ্গেই। কিন্তু এমন ভয়ানক এক মানুষের সঙ্গে বাকিটা জীবন কাটাতে হবে ভেবে তার শরীর অবশ হয়ে এল। আমজাদ ঘরে ঢুকল তার কিছুক্ষণ বাদেই। সে পাখিকে অনঢ় বসে থাকতে দেখে খেঁকিয়ে উঠল, ‘ওই খানকির ঘরের খানকি, বেশ্যা মাগি, তোরে আমি কী বলছিলাম? কথা কানে যায় না? কাপুড় খোল। খোল কাপুড়।’
পাখি কিছু বলার সুযোগ পেল না। তার আগেই আমজাদ কষিয়ে চড় বসাল তার গালে। তারপর সজোরে লাথি মারল কোমরে। কিছু বোঝার আগেই পাখি ছিটকে পড়ল বিছানায়। আর সঙ্গে সঙ্গেই হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল আমজাদ। তারপর লোমশ দুহাতে শরীরের সব শক্তি জড়ো করে পাখিকে নিরাভরণ করতে লাগল সে। সঙ্গে সপাটে চড়থাপ্পড় বসাতে লাগল তার গালে। অনেক চেষ্টা করেও আর নিজেকে রক্ষা করতে পারল না পাখি। বরং তার ওই প্রতিরোধের চেষ্টা আরও হিংস্র করে তুলল আমজাদকে। সে অকস্মাৎ পাখির গলা চেপে ধরল। যেন এখনই খুন করে ফেলবে। পাখি কিছুই বুঝতে পারছে না। লোকটা তার সঙ্গে এমন কেন করছে?
প্রবল আতঙ্কে তার চোখ যেন কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে। ফুসফুস বায়শূন্য হয়ে যাচ্ছে। হাঁ করে নিশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করল সে। কিন্তু পারল না। তবে অনেক কষ্টে আমজাদের হাতে কামড় বসাতে পারল। এতে খানিক শিথিল হলেও পুরোপুরি নিরস্ত করা গেল না তাকে। বরং এতক্ষণের তুমুল ধস্তাধস্তিতে আমজাদের ধারালো নখ তার চিবুক, গলা, কাঁধ ক্ষতবিক্ষত করে দিল। পরনের লাল শাড়িটা লুটাতে লাগল মেঝেতে। আধছেঁড়া ব্লাউজটা কোনোমতে বুকের বাঁদিকটা আড়াল করে ঝুলে রইল শরীরে। চুলগুলো ঝড়ে বিধ্বস্ত ফসলের মাঠের মতো এলোমেলো, অবিন্যস্ত পড়ে রইল কপালের দুপাশে।
আমজাদ হঠাৎ পাখির হাত দুখানা শক্ত করে চেপে ধরল বিছানার সঙ্গে। তারপর হিসহিস করে বলল, ‘তুই তো দেহি ছাইয়ের তলার আগুনরে মাগি। কয়লা। তোর তো ম্যালা জেদ। কিন্তু কই, তোর চেহারা দেইখা তো এত কিছু বোঝন যায় না।’ বলেই পাখির মুখের কাছে নিজের দুর্গন্ধযুক্ত, নোংরা ঠোঁটজোড়া নামিয়ে আনতে লাগল সে। তার চোখে-মুখে বিভৎস উল্লাস, ‘আয়, আয়, তোর আগুন নিভাই দেই। আয়। দেহি, কোনখানে কতখানি আগুন জমা আছে তোর।’
পাখি নিজের সব শক্তি দিয়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু পারল না। বরং আমজাদের মুখ থেকে বের হওয়া সস্তা মদের বিকট গন্ধে যেন আরও একবার গা গুলিয়ে উঠল তার। কিন্তু নিজেকে কিছুতেই মুক্ত করতে পারল না সে। ভয়ংকর মাংসাশী এক প্রাণীর মতো আমজাদের দাঁতালো মুখ আর লকলকে জিব তার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। সেই মুখের দিকে তাকিয়ে ক্রমশই জড়সড়ো হয়ে যেতে লাগল পাখি। আচ্ছা, এই লোকটা তার সঙ্গে এমন কেন করছে? সে তো এখন তার বিয়ে করা স্ত্রী-ই। তাহলে?
অনেক ভেবেও এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেল না পাখি। তবে একদম শেষ মুহূর্তে যেন আচমকাই সংবিৎ ফিরে পেল সে। নিজের বুকের কাছে ঢালের মতো ভাঁজ করে রাখা হাঁটুজোড়া সবেগে সোজা করে ফেলল। আর সঙ্গে সঙ্গেই ছিটকে গিয়ে মেঝেতে পড়ল আমজাদ। পাখির কাছ থেকে এমন অভাবিত শক্ত প্রতিরোধ সে আশা করে নি। ঠং শব্দে কোনো কিছুর সঙ্গে মাথাটা ঠুকে গেল তার। আমজাদের আঘাত কতটা তীব্র পাখি তা জানে না। তবে সে আচমকা মৃত্যুভয়ে ভীত হয়ে উঠল। আমজাদ যদি এখন ছুটে এসে তাকে আঘাত করে? কিংবা খুন করে ফেলে? এইটুকু সময়েই তাকে যতটুকু চিনতে পেরেছে, তাতে কাউকে খুনটুন করে ফেলাও তার জন্য অস্বাভাবিক কিছু নয়। নিশ্চয়ই এবার বদ্ধ উন্মাদ হয়ে যাবে সে।
পাখি আর কিছু ভাবতে পারল না। সে হঠাৎ বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল। তারপর মেঝেতে পড়ে থাকা শাড়িটা কুড়িয়ে নিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। বাইরে তখন তুমুল ঝড়বৃষ্টি। পাখি সেই ঝড়বৃষ্টির মধ্যে নেমে এল উঠানের গাঢ় অন্ধকারে। তারপর ছুটতে লাগল দিগ্বিদিক। যেন বুনো দাঁতাল শুয়োরের মতো এখনই তেড়ে আসবে আমজাদ।
আগুনডানা মেয়ে—বইটির হার্ডকপি এবং পিডিএফ
Last updated: