রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ PDF: রামাদান মুমিনের জন্য মহান আল্লাহ-র পক্ষ থেকে এক বিশেষ অনুগ্রহ ও নেয়ামত। মুমিনের জন্য আনন্দময় সংবাদ ও রহমত। তাই আমাদের কর্তব্য- এই মহৎ মাসের যথাযথ সদ্ব্যবহার করা; বিপুল পুণ্যার্জনে সর্বাত্মক চেষ্টা করা এবং মহান আল্লাহ-র দরবারে অনবরত করাঘাত করে যাওয়া। রমজান মাসে সারাদিন রোজা রাখতে হয় ৷ রোযা হলো একজন মুমিন ব্যক্তি নিয়তের সাথে সুবহে সাদেক (ফজরের ওয়াক্তের প্রথম) হতে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সব ধরনের রোযা ভঙ্গকারী-যেমন: পানাহার, জৈবিক ও শারিরীক—কোনো কিছু ভোগ করা থেকে বিরত থাকা। রোজা ভঙ্গের অনেকগুলো কারণ রয়েছে, নিচে রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ PDF আকারে দেওয়া হয়েছে ৷
ইসলামের মৌল পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম হলো রোজা। যা রমাদান মাসে আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি মুমিন নর-নারীর ওপর ফরজ করেছেন। রমাদান এক অপার বরকত ও মহিমান্বিত মাস। যার প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত রাশি রাশি পুণ্যে ভরপুর। রাত-দিনের সমস্ত সময় আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অনুপম উপলক্ষ্য। এই মাসের প্রাপ্তি মুমিনদের জন্য বিরাট এক সৌভাগ্য।
স্বয়ং আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাস প্রাপ্তির জন্য কায়মনোবাক্যে দুআ করতেন। আল্লাহ তায়ালা যে সমস্ত ইবাদত সর্বকালে সকল উম্মতের জন্য ফরজ করেছেন তার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ হলো রোজা। অন্যান্য উম্মতের ন্যায় উম্মতে মুহাম্মদির ওপরও রমাদানের রোজাকে ফরজ করেছেন। এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে
‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রমাদানের রোজাকে ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।
সূরা বাকারা: ১৮৫
রোজা প্রসঙ্গে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে বহু হাদিস, যাতে প্রস্ফুটিত হয়েছে রমাদানের গুরুত্ব, ফজিলত, করণীয়, বর্জনীয়সহ আনুসাঙ্গিক সকল বিষয়, সে সমস্ত হাদিসের দিকে গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করলে উপলব্ধি হয় রমাদানের মাহাত্ম্য ও মর্যাদা।
আরও পড়ুনঃ
সিয়াম বা রোযার অর্থ
আভিধানিক অর্থ হল: বিরত রাখা, আবদ্ধ রাখা। পারিভাষিক অর্থ হল : নিয়তের সাথে সুবহে সাদেক (ফজরের ওয়াক্তের প্রথম) হতে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সব ধরনের রোযা ভঙ্গকারী-যেমন: পানাহার, জৈবিক ও শারিরীক—কোনো কিছু ভোগ করা থেকে বিরত থাকা।
রমাদান এক বড় নেয়ামত:
রমাদান আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতরাজির মধ্যে অন্যতম একটি নেয়ামত। আমরা এই বরকতময়ী মাসের বাস্তবতা ও মর্যাদা সম্পর্কে কি করে জানব! কেননা, আমরা দিবা-রাত্রি দুনিয়াদারী, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েই ব্যস্ত থাকি। ভাববার সময়ই বা ক’জন পাই। সকাল-সন্ধ্যা দুনিয়া কামাইয়ের দৌড় ঝাপে লিপ্ত থাকি। সবই করি পেটের দায়ে। আল্লাহ তায়ালা স্বীয় অনুগ্রহে যাকে এর বুঝ দান করেন এবং এ বরকতময়ী মাসের আলোকরশ্মী দ্বারা আলোকিত করার ইচ্ছা করেন, ভরপুর সফলতা তার পদ চুম্বন করবে। এ মাসের যথাযথ গুরুত্ব তাদের কাছে অপরিসীম।
রোজা ঢাল স্বরূপ
রোযা গোনাহ থেকে রক্ষাকারী ঢাল। রোযার মাধ্যমে অন্তরে তাকওয়া পয়দা হয়। ঈমানী লজ্জা জাগ্রত হয়, যা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার অনেক বড় উপায়। রোযা কবরে, হাশরে ও আখেরাতের সকল মনযিলে বান্দার জন্য ঢাল। সবশেষে জাহান্নামের আগুন থেকেও রক্ষাকারী ঢাল। তবে এগুলো তখনই হবে যখন রোযা শুধু আইনি রোযা না হয়ে প্রকৃত রোযা হবে। আইনি রোযা বলতে উদ্দেশ্য হল- সঠিক নিয়তের সঙ্গে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রীমিলন এবং ওই সব কাজকর্ম থেকে বিরত থাকা, যা ফিক্হ ও ফতোয়ার দৃষ্টিতে রোযা বিনষ্ট করে। কোনো সন্দেহ নেই যে, এটুকু দ্বারা রোযার অপরিহার্যতা থেকে দায়মুক্ত হওয়া যায়, কিন্তু এটুকু দ্বারা রোযা ‘ঢাল’ হয় না। রোযা তখনই ঢাল হয় যখন ঈমান ও ইহতেসাবের সঙ্গে তা আদায় করা হয় এবং রোযার সকল আদব রক্ষা করা হয়।
রোযার আদবগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে এভাবে বলা যায় যে, রোযার হালতে রোযাদার আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ওই সব কাজ পরিত্যাগ করে, যা তার জন্য অন্য মাসগুলোতে হালাল ছিল এবং রমযানের রাতেও যা তার জন্য হালাল। এ বিষয়গুলো শুধু এজন্য পরিত্যাগ করে যে, রোযার হালতে এই কাজগুলো থেকে বিরত থাকার আদেশ আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন।
তাহলে যেসব মন্দ কাজ সব সময়ের জন্য আল্লাহ তাআলা হারাম ও নিষিদ্ধ করেছেন যথা- গীবত, শেকায়েত, মিথ্যা, প্রতারণা, সুদ, জুয়া, খেয়ানত, আত্মসাৎ, ঝগড়া-বিবাদ, হারাম পানাহার, নামায না পড়া, সিনেমা, টিভি, ভিসিআর দেখা ইত্যাদি পরিহার করা কি অপরিহার্য নয়? মোটকথা রোযার আদব এটাই যে, হারাম কাজ ও হারাম বিষয়াদি থেকে বিরত থাকবে এবং শুধু দুই অঙ্গ নয়, শরীরের সকল অঙ্গের রোযা রাখবে। মুখ, কান, চোখ ও হাত-পা সকল অঙ্গকে গোনাহ থেকে পবিত্র রাখবে।
রোজা বা ছিয়ামের তাৎপর্য :
ছিয়ামের তাৎপর্য হ’ল আল্লাহ্র দাসত্বের জন্য মনোজগতকে প্রস্তুত করা। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য (যারিয়াত ৫১/৫৬)। আর ইবাদত হ’ল তিন ধরনের। (১) আত্মিক ইবাদত (২) দৈহিক ইবাদত ও (৩) আর্থিক ইবাদত। ছিয়ামের মাধ্যমে তিনটি ইবাদত একসাথে করা হয়। যা সম্ভব হয় কেবলমাত্র আল্লাহভীরুতার মাধ্যমে। আর আল্লাহভীরুতা অর্জনই হ’ল ছিয়ামের মুখ্য উদ্দেশ্য। আল্লাহভীরুতা না থাকলে পৃথিবীতে মানুষ শয়তানের তাবেদার হবে। তাতে পৃথিবী অশান্তি ও বিশৃংখলায় ভরে যাবে। ছিয়াম সাধনার মূল তাৎপর্য এখানেই।
সম্মানিত ভাই! আল্লাহ তা’আলা রমাযান মাসকে অন্যান্য মাসের ওপর বেশ কয়েকটি ফাযীলাত ও বৈশিষ্ট্য দ্বারা বিশেষিত করেছেন, তার বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:
(১) সাওম পালনকারীর (রোযাদারের) মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকে আম্বরের চেয়েও বেশী সুগন্ধময়।
(২) ফিরিশতাগণ সাওম পালনকারীর জন্য ইফতারের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা চাইতে থাকেন।
(৩) আল্লাহ প্রত্যেহ তাঁর জান্নাতকে সুসজ্জিত করেন এবং বলেন অচিরেই আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের ওপর থেকে দায়িত্বভার ও কষ্টের বোঝা সরিয়ে নেয়া হবে, অতঃপর তোমার দিকে তারা আগমন করবে।
(৪) এ মাসে শাইত্বানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।
(৫) এ মাসে জান্নাতের দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দ্বারগুলি বন্ধ করে রাখা হয়।
(৬) এ মাসে কুদরের রাত্রি রয়েছে যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেয়, যে ব্যক্তি এ রাত্রির মঙ্গল হারাল সে যেন সকল মঙ্গল থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ল।
(৭) রমাযানের শেষ রাত্রিতে (সুষ্ঠুভাবে) সাওম পালনকারীদের ক্ষমা করে দেয়া হয়।
(৮) রমাযানের প্রতি রাতেই আল্লাহর পক্ষ থেকে কতিপয় লোক জাহান্নাম থেকে মুক্তি পায়।
হে প্রিয় ভাই! যে মাসের এত বৈশিষ্ট্য ও ফাযীলাত তা আমরা কিভাবে গ্রহণ করব?
অহেতুক কাজ ও দেরীতে নিদ্রা যাপনের মাধ্যমে? বা রমাযানের আগমনে ভারী ও বিরক্তিবোধের মাধ্যমে? আল্লাহর কাছে এসব থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।
বরং সৎকর্মশীল বান্দা এ মাসকে খালিস তাওবাহ্ ও গুরুত্ব দেয়ার সত্য প্রতিজ্ঞার মাধ্যমে গ্রহণ করবে এবং এ মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে নেক ‘আমাল দ্বারা আবাদ করবে, আমরা আল্লাহর কাছে তার সুন্দরতম ‘ইবাদাতের জন্য সাহায্য চাচ্ছি।
রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ PDF | Roja Vonger Karon Somuho PDF
প্রিয় ভিউয়ার, আপনারা অনেকেই অনলাইনে রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ PDF আকারে খুঁজে থাকেন ৷ আজকে আপনারা রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ পিডিএফ পেয়ে যাবেন ৷ নিজে পড়ুন, অপরকে পড়ার উৎসাহ দিন ৷ ধন্যবাদ সবাইকে ৷
Last updated: