প্রচলিত বিভিন্ন খতম তাৎপর্য ও পর্যালোচনা
- বইঃ প্রচলিত বিভিন্ন খতম তাৎপর্য ও পর্যালোচনা ৷
- শাইখ মুস্তাফা সোহেল হিলালী ৷
- সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া ৷
- ইসলাম হাউজ ৷
খতম শব্দের অর্থ ও প্রয়োগ
‘খতম’ শব্দটি মূলত আরবী ، ختم শব্দের বাংলা ব্যবহার। যার মূল অর্থ হচ্ছে : কোনো বস্তুতে মোহর লাগানো বা তাকে সিলযুক্ত করা। কর্ম যুগে শব্দটির অর্থ হয়, কাজটি শেষ করা। এভাবে বিভিন্ন শব্দযোগে তার বিভিন্ন অর্থ হয় যেমন, মাটি দ্বারা মুখ বন্ধ করা, এড়িয়ে যাওয়া, হৃদয়ে মোহর এঁটে দেওয়া তথা অবুঝ করে দেওয়া, কোনো বস্তুর শেষে পৌঁছা ইত্যাদি। কিতাব বা কুরআন শব্দযোগে তার অর্থ হয়: সম্পূর্ণটুকু পড়ে শেষ করা।
কুরআনে শব্দটি ক্রিয়ামুলে শুধুমাত্র হৃদয়ে মোহর এঁটে দেওয়ার অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন:
“আল্লাহ তাদের হৃদয়ে ও কানে মোহর এঁটে দিয়েছেন, আর তাদের চোখের উপর রয়েছে আবরণ রয়েছে”।
তবে বিভিন্ন হাদীসে ‘ختم’ শেষ করা অর্থে ব্যবহার হয়েছে। যেমন আয়াতটি শেষ পর্যন্ত পড়া, সুরাটি শেষ পর্যন্ত পড়া ইত্যাদি শব্দ হাদীসে ব্যবহার হয়েছে। শেষ পর্যন্ত পড়া বলতে যেমন পুরোটা পড়া বুঝায়, তেমনি যে কোনো জায়গা থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত পৌছলেও এ শব্দ ব্যবহার হয়। এ ক্ষেত্রে পুরো সূরা পড়া উদ্দেশ্য নয়। যেমন, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘুম থেকে উঠে মিসওয়াক ও ওযু করার পর সূরা আলে ইমরানের ১৯০ নং আয়াত থেকে পড়তে শুনেন, অতঃপর ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন:
“অতঃপর তিনি (রাসূল) এই আয়াতগুলো পড়েন, এমনকি সূরা শেষ করেন”।
এখানে সূরা খতম বলতে পুরো সূরা পড়া নয়, বরং ১৯০ নং আয়াত থেকে শুরু করে সূরার শেষ পর্যন্ত পড়া।
কুরআন সম্পূর্ণটা পড়ার ক্ষেত্রে খতম শব্দের ব্যবহার সাহাবিদের মধ্যে ছিল। তবে ‘হাদীস খতম’ বা ‘হাদীসটি খতম’ এমন কোনো ব্যবহার বা প্রয়োগ তাদের মাঝে ছিল বলে জানতে পারি নি। ‘খতমে বুখারী’র আলোচনায় এমন ব্যবহার না থাকার কারণ আমরা বুঝতে পারব ইন-শাআল্লাহ। তবে হাদীসটি খতম বলতে তা পুরোটা পড়া বুঝাবে। তাই কেউ একটি হাদীস পড়ে হাদীসটি খতম করেছি বলতে কোনো বাধা নেই।
এভাবে খতমে দো’আ ইউনুস বললে পুরো দো’আটা পড়া বুঝাবে, যদিও এমন বলার প্রচলন ছিল না। কিন্তু খতমে ইউনুস বললে: এতবার পড়া, অমুক খতম বললে: এতবার পড়া, তমুক খতম বললে এতবার পড়া, এসব ব্যবহার সম্পূর্ণ নতুন মনগড়া বানানো।
খতম শব্দটি শেষ পর্যন্ত পৌঁছা বা পুরোটা পড়ার অর্থে ব্যবহার হলেও ‘খতম করানো’ বা ‘খতম পড়ানো’, এমন কোনো ব্যবহার বা প্রয়োগ না সাহাবিদের যুগে ছিল, না খাইরুল কুরুনে ছিল। কেননা কুরআন, হাদীস, দো’আ, দুরূদ, যিকর ইত্যাদির আমলের এই সিস্টেম বা পদ্ধতিটি একেবারেই নতুন। তাই ‘খতম’ শব্দের শাব্দিক অর্থ অভিধানে পেলেও আমাদের সিস্টেমের তার পারিভাষিক কোনো অর্থ আহলে ইলমদের কোনো কিতাবে পাবেন না।
আমরা ‘খতম’ বলতে যা বুঝি এ সবকিছু সোনালীযুগ দূরের কথা, মুহাক্বীক্ব কোনো আলেম থেকে এ গুলোর আবিষ্কার হয়নি বলে পরিস্কার বুঝা যায়। আমাদের জানামতে প্রচলিত যে খতমগুলো রয়েছে সেগুলোর আলোচনায় আমরা এগুলোর তাৎপর্য, যথার্থতা, গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করব।
মহাগ্রন্থ আলকুরআন আল্লাহর কালাম এবং প্রতিটি মানুষের জীবন বিধান। এর গুরুত্ব কারো কাছে অজানা নয়। তাই সর্বপ্রথম আমাদের সমাজে অধিকহারে প্রচলিত এই মহাগ্রন্থ আল কুরআনের খতম দিয়েই শুরু করছি। নিজে কুরআন না পড়ে, কুরআনের শিক্ষা নিজে গ্রহণ না করে, যে কোনো কারণে অন্যকে ভাড়া করে কুরআন পড়িয়ে নেওয়ার যথার্থতা কতটুকু তা আলোচনা করলে বুঝতে পারব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর তওফিক কাম্য।
বিভিন্ন খতম
- খতমে কুরআন
- খতমে ইউনুস
- খতমে বুখারী
- খতমে না-রী
- খতমে ইয়াসিন
- খতমে শিফা
- খতমে তাহলিল
- খতমে তাসমিয়াহ
- খতমে খাজেগান
- খতমে জালালী
- খতমে দুরুদে মাহি
- ইখলাস দ্বারা কুরআন খতম
বিস্তারিত জানতে পুরো বইটি পড়ুন,,
০১. খতমে শিফা PDF
খতমে শিফা
‘শিফা’ শব্দের আরবী মূল শব্দ ‘شفاء’ যার অর্থ রোগমুক্ত করা বা রোগ নিরাময়। এভাবে ‘খতমে শিফা’ অর্থ: রোগ নিরাময় করার খতম। কেউ অসুস্থ হলে তার রোগমুক্তির আশায় এই খতম পড়ানো হয়। আমাদের দেশে প্রচলিত একটি বইয়ে এই খতমটি যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে:
খতমে শিফা
(لا اله الا الله )লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
এই পবিত্র কালেমা একলক্ষ পঁচিশ হাজার বার পাঠ করাকে “খতমে শিফা” বলে। একে খতমে তাহলীলও বলা হয়। এই খতম পাঠ করিয়া এর সোয়াব মৃত লোকের রূহের উদ্দেশ্যে বখশিশ করিয়া দিলে নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা এর উসিলায় তাহাকে মাফ করিয়া দিবেন ও বেহেশত দান করবেন। যদি কোনো ব্যক্তি কোনো কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয় অথবা কোনো কঠিন রোগে আক্রান্ত হইয়া দীর্ঘদিন ভুগিতে থাকে, তবে উক্ত কালাম তাহার নিকট বসিয়া সশব্দে পাঠ করিতে থাকিবে, যেন সেই রোগী উহা শুনিতে পায়।
আল্লাহর ফযলে খতম শেষ হইবার পূর্বেই ইহার আশ্চর্য ফল বুঝিতে পারা যায়। কোনো মুমূর্ষু লোকের নিকট বসে এই খতম পাঠ করলে তাহার রোগ যন্ত্রনা লাঘব হয় এবং পরমায়ু শেষ হইয়া থাকিলে আছানির সহিত মৃত্যু হয়। এই খতম একজনে পাঠ করাই ভাল, তবে জরুরী প্রয়োজনে ১০/১৫ জন একত্র বসিয়া একদিনেও খতম করা চলে।”
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি’ঊন। ওহি নির্ভর কথার উপর নিজ থেকে কিছু বলার কি দুঃসাহসিকতা!!
রোগ আল্লাহ দেন এবং তিনিই মানুষকে রোগমুক্ত করেন। কারো রোগ দেখা দিলে রোগীর নিজের কী করণীয় এবং তার বেলায় অন্যদের কী করণীয় সবই বলে গেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষার মাঝে ‘খতমে শিফা’ নামের কিছু নেই।
বিস্তারিত জানতে নিচের পিডিএফটি পড়ুণ,,
০২. খতমে খাজেগান PDF
ফার্সি শব্দ ‘খাজা’ যার বহুবচন ‘খাজেগাঁ’। খতমের নাম থেকেই তা যে অনারব কোনো সুফি থেকে আবিষ্কৃত তা সহজেই অনুমেয়। এই নামকরণের কারণে বলা হয়, “পীর-পীরানগণের উপর দো’আ করা হয় বলিয়া এই খতমের নাম খাজেগান বা পীরান 103 রাখা হইয়াছে”।
..বিস্তারিত পুরো বইটি পড়ুন ৷
প্রচলিত বিভিন্ন খতম তাৎপর্য ও পর্যালোচনা PDF
বইটির পিডিএফ(PDF) ফাইল পেতে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করুন,,
আরও পড়ুনঃ
Last updated: